ব্লগ পোস্ট ৩: ১ ও ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর (HTML Table)
ষষ্ঠ শ্রেণির অষ্টম অধ্যায় ‘প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের সংস্কৃতিচর্চার নানাদিক’ থেকে শিক্ষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান, শিল্পকলা সম্পর্কিত ২৫টি ১ নম্বরের এবং ২০টি ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে হাজির হলাম।
১ নম্বরের প্রশ্ন
প্রাচীন ভারতে শিক্ষাদানের প্রধান ভাষা কী ছিল? | মুলত সংস্কৃত, তবে পালি ও প্রাকৃতও ব্যবহৃত হতো। |
---|---|
‘উপনিষদ’ কীসের অংশ? | বেদের শেষ বা জ্ঞানকাণ্ডের অংশ। |
তক্ষশিলা বর্তমানে কোন দেশে অবস্থিত? | পাকিস্তানে। |
মহাভারতের রচয়িতা কে? (ঐতিহ্য অনুসারে) | বেদব্যাস। |
কালিদাস কোন গুপ্ত সম্রাটের সভাকবি ছিলেন বলে মনে করা হয়? | দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্য। |
‘জাতক’ কীসের গল্প? | বুদ্ধের পূর্বজন্মের কাহিনী। |
আর্যভট্টের লেখা একটি গ্রন্থের নাম লেখ। | আর্যভট্টীয় বা সূর্যসিদ্ধান্ত। |
প্রাচীন ভারতে অস্ত্রোপচারের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির উল্লেখ কোন গ্রন্থে পাওয়া যায়? | সুশ্রুত সংহিতায়। |
মৌর্যযুগের একটি পালিশ করা স্তম্ভের উদাহরণ দাও। | সারনাথের অশোক স্তম্ভ। |
গান্ধার শিল্প কোথায় বিকাশ লাভ করেছিল? | ভারতের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে (গান্ধার)। |
অজন্তা গুহা কোথায় অবস্থিত? | মহারাষ্ট্রে। |
গুপ্তযুগের একটি বিখ্যাত ভাস্কর্যের নাম লেখ। | সারনাথের উপবিষ্ট বুদ্ধমূর্তি। |
‘পুরাণ’ কয়টি? | আঠারোটি। |
দক্ষিণ ভারতের প্রাচীনতম সাহিত্যকে কী বলা হয়? | সংগম সাহিত্য। |
‘পাই’ (π) এর মান প্রাচীন কোন ভারতীয় গণিতবিদ নির্ণয় করেছিলেন? | আর্যভট্ট। |
প্রাচীন ভারতের দুটি বিখ্যাত চিকিৎসা বিষয়ক গ্রন্থের নাম লেখ। | চরক সংহিতা ও সুশ্রুত সংহিতা। |
সাঁচির স্তূপ কোন রাজ্যে অবস্থিত? | মধ্যপ্রদেশে। |
মথুরা শিল্পে কোন দেবতার মূর্তি বেশি পাওয়া যায়? | বুদ্ধ, জৈন তীর্থঙ্কর এবং হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি। |
প্রাচীন ভারতের একটি শিলাকর্তিত গুহা মন্দিরের নাম লেখ। | কার্লে বা অজন্তার চৈত্য। |
বাঘ গুহার চিত্রগুলি কোন যুগের? | গুপ্ত বা গুপ্ত পরবর্তী যুগের। |
‘মেঘদূতম্’ কে লিখেছেন? | কালিদাস। |
ভারতের কোন অংশে দ্রাবিড় রীতির মন্দির দেখা যায়? | দক্ষিণ ভারতে। |
প্রাচীন ভারতের একজন বিখ্যাত ব্যাকরণবিদের নাম লেখ। | পাণিনি। |
কোন যুগে নালন্দা মহাবিহার শিক্ষার প্রধান কেন্দ্র হয়ে ওঠে? | গুপ্ত ও পাল যুগে। |
গান্ধার শিল্পে বুদ্ধের মূর্তি কেমন দেখতে ছিল? | গ্রিক দেবতা অ্যাপোলোর মতো, কোঁকড়ানো চুল ও ঢেউখেলানো পোশাক। |
২ নম্বরের প্রশ্ন
প্রাচীন ভারতের গুরুকুল শিক্ষা ব্যবস্থার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখ। | উত্তর: গুরুকুল শিক্ষা ব্যবস্থায় ছাত্ররা গুরুর বাড়িতে থেকে শিক্ষা লাভ করত এবং গুরু-শিষ্যের মধ্যে গভীর শ্রদ্ধার সম্পর্ক থাকত। শিক্ষা ছিল মূলত মৌখিক। |
---|---|
তক্ষশিলা ও নালন্দা কেন বিখ্যাত ছিল? | উত্তর: তক্ষশিলা ছিল প্রাচীন বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উচ্চশিক্ষা কেন্দ্র, যেখানে নানা বিষয়ে পড়ানো হত। নালন্দা ছিল একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বৌদ্ধ মহাবিহার ও জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র। |
কালিদাসের সাহিত্যকর্মের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর। | উত্তর: কালিদাসের রচনায় প্রকৃতির অপূর্ব বর্ণনা এবং মানবীয় অনুভূতি ও রসের গভীর প্রকাশ দেখা যায়। তাঁর ভাষা ছিল প্রাঞ্জল ও অলংকারপূর্ণ। |
সংগম সাহিত্য বলতে কী বোঝায়? এর বিষয়বস্তু কী ছিল? | উত্তর: প্রাচীন দক্ষিণ ভারতের (মূলত তামিল) কবিদের সভাকে ‘সংগম’ বলা হত এবং তাদের রচিত সাহিত্য সংগম সাহিত্য নামে পরিচিত। এর বিষয়বস্তু ছিল প্রেম, যুদ্ধ, বীরত্ব ও সামাজিক রীতিনীতি। |
প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চার গুরুত্ব কী ছিল? | উত্তর: প্রাচীন ভারতে যজ্ঞবেদী নির্মাণ, জ্যোতির্বিজ্ঞান, বাণিজ্য এবং দৈনন্দিন হিসাবের জন্য গণিতচর্চা অপরিহার্য ছিল। শূন্য ও দশমিক পদ্ধতির উদ্ভাবন গণিতকে সমৃদ্ধ করেছে। |
আর্যভট্টের প্রধান অবদানগুলি কী কী? | উত্তর: আর্যভট্ট ছিলেন একজন বিখ্যাত গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ। তিনি পৃথিবীর আহ্নিক গতি, সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের কারণ ব্যাখ্যা করেন এবং পাই (π) এর মান নির্ণয় করেন। |
প্রাচীন ভারতের চিকিৎসাবিজ্ঞান (আয়ুর্বেদ) কতটা উন্নত ছিল? | উত্তর: আয়ুর্বেদ ছিল অত্যন্ত উন্নত। চরক ও সুশ্রুতের মতো চিকিৎসকরা রোগ নির্ণয়, ভেষজ ঔষধ প্রস্তুত এবং এমনকি জটিল অস্ত্রোপচারও করতেন। |
মৌর্য শিল্পকলার দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর। | উত্তর: মৌর্য শিল্পকলায় পাথরের মসৃণ পালিশ এবং বিশাল আকারের একাশিলা স্তম্ভ ও তার শীর্ষে পশু মূর্তি স্থাপন ছিল প্রধান বৈশিষ্ট্য। এছাড়া স্তূপ নির্মাণও শুরু হয়েছিল। |
গান্ধার ও মথুরা শিল্পরীতির মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখ। | উত্তর: গান্ধার শিল্পে গ্রিক-রোমান প্রভাব স্পষ্ট এবং বুদ্ধমূর্তিগুলি বিদেশি আদলে তৈরি, মাধ্যম ছিল সাধারণত ধূসর পাথর। মথুরা শিল্পরীতি দেশীয় ছিল এবং এতে লাল বেলেপাথর ব্যবহৃত হত, মূর্তিগুলি ছিল বলিষ্ঠ। |
গুপ্ত শিল্পকলাকে ‘স্বর্ণযুগ’-এর শিল্প বলা হয় কেন? | উত্তর: এই যুগে স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও চিত্রকলা – শিল্পের প্রতিটি ক্ষেত্রে অসাধারণ উৎকর্ষ লাভ করেছিল। সুন্দর মন্দির, মসৃণ ও ভাবগম্ভীর বুদ্ধমূর্তি এবং অজন্তার মনোরম গুহাচিত্র এর প্রমাণ। |
অজন্তা গুহাচিত্রের বিষয়বস্তু ও শিল্পশৈলী সম্পর্কে লেখ। | উত্তর: অজন্তার গুহাচিত্রের প্রধান বিষয়বস্তু হলো জাতকের গল্প ও বুদ্ধের জীবনের নানা ঘটনা। এর চিত্রশৈলী অত্যন্ত জীবন্ত, রঙ ব্যবহারে দক্ষতা এবং রেখার লালিত্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। |
স্তূপ, চৈত্য ও বিহারের মধ্যে পার্থক্য কী? | উত্তর: স্তূপ হলো বুদ্ধ বা বৌদ্ধ সাধুদের দেহাবশেষের উপর নির্মিত অর্ধগোলাকার স্মৃতিসৌধ। চৈত্য হলো বৌদ্ধদের খিলানযুক্ত ছাদসহ উপাসনাগৃহ বা প্রার্থনা কক্ষ। বিহার হলো বৌদ্ধ ভিক্ষু-ভিক্ষুণীদের আবাসস্থল বা মঠ। |
প্রাচীন ভারতে সাহিত্য রচনার উদ্দেশ্য কী ছিল? | উত্তর: সাহিত্য রচনার উদ্দেশ্য ছিল ধর্মীয় ও নৈতিক উপদেশ দান, রাজাদের গুণকীর্তন, সামাজিক রীতিনীতি তুলে ধরা, বিনোদন এবং জ্ঞান ও সংস্কৃতির প্রসার ঘটানো। |
‘পুরাণ’গুলি কেন গুরুত্বপূর্ণ? | উত্তর: পুরাণগুলিতে সৃষ্টিতত্ত্ব, দেবদেবীর কাহিনী, রাজবংশগুলির ইতিহাস এবং প্রাচীন ভারতের সামাজিক ও ধর্মীয় রীতিনীতি সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। |
প্রাচীন ভারতে বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে কী কী বাধা ছিল? | উত্তর: অনেকসময় ধর্মীয় গোঁড়ামি, কুসংস্কার, তথ্যের আদানপ্রদানে সীমাবদ্ধতা এবং পরীক্ষামূলক পদ্ধতির অভাব বিজ্ঞানচর্চার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। |
দক্ষিণ ভারতের মন্দির স্থাপত্যের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখ। | উত্তর: দক্ষিণ ভারতের মন্দিরগুলি সাধারণত উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা থাকত এবং মন্দিরের প্রবেশপথে বিশাল গোপুরম্ (তোরণদ্বার) থাকত। মূল মন্দিরের উপর পিরামিড আকৃতির উঁচু বিমান বা শিখর দেখা যেত। |
প্রাচীন ভারতীয় সমাজে শিক্ষার সুযোগ কাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল? | উত্তর: উচ্চবর্ণের পুরুষদের মধ্যেই শিক্ষার সুযোগ মূলত সীমাবদ্ধ ছিল, যদিও কিছু ক্ষেত্রে নারী ও অন্যান্য বর্ণের মানুষের শিক্ষার উদাহরণও পাওয়া যায়। তবে সাধারণ মানুষের জন্য ব্যাপক শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল না। |
‘নাট্যশাস্ত্র’ থেকে প্রাচীন ভারতের কোন শিল্পকলা সম্পর্কে জানা যায়? | উত্তর: ভরতমুনি রচিত ‘নাট্যশাস্ত্র’ থেকে প্রাচীন ভারতের নাটক, সঙ্গীত, নৃত্য এবং মঞ্চাভিনয়ের বিভিন্ন নিয়ম-কানুন, কলাকৌশল ও নন্দনতত্ত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়। |
প্রাচীন ভারতে চিকিৎসাশাস্ত্রে রোগ প্রতিরোধের উপর কতটা জোর দেওয়া হত? | উত্তর: আয়ুর্বেদে রোগ নিরাময়ের পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধের উপরেও বিশেষ জোর দেওয়া হত। এর জন্য সঠিক আহার-বিহার, ঋতুচক্র মেনে জীবনযাপন এবং ভেষজ উপাদানের ব্যবহারের নির্দেশ ছিল। |
সারনাথের সিংহচতুর্মুখ স্তম্ভশীর্ষের তাৎপর্য কী? | উত্তর: এটি সম্রাট অশোকের তৈরি, যা বর্তমানে ভারতের জাতীয় প্রতীক। চারটি সিংহ চারদিকে বুদ্ধের ধর্মচক্র প্রবর্তনের বাণী ঘোষণা করছে। এটি শান্তি, শক্তি ও মৈত্রীর প্রতীক। |