১ ও ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর অর্থনীতি ও জীবনযাত্রা থেকে । WBBSE Class VI Chapter 7

ষষ্ঠ শ্রেণির সপ্তম অধ্যায় ‘অর্থনীতি ও জীবনযাত্রা’ থেকে প্রাচীন ভারতের কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, মুদ্রা ও গিল্ড সম্পর্কিত ২৫টি ১ নম্বরের এবং ২০টি ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর।

১ নম্বরের প্রশ্ন

প্রাচীন ভারতে চাষের কাজে ব্যবহৃত প্রধান দুটি পশুর নাম লেখ। গরু এবং বলদ।
‘কর্ষক’ কাদের বলা হত? যাঁরা জমি চাষ করতেন বা কৃষক, তাঁদের কর্ষক বলা হত।
প্রাচীন ভারতের দুটি প্রধান উৎপন্ন শস্যের নাম লেখ। ধান এবং গম।
‘শ্রেণি’ বা ‘গিল্ড’ কী ছিল? একই পেশার কারিগর বা বণিকদের সংগঠন।
প্রাচীন ভারতে ব্যবহৃত দুটি মূল্যবান ধাতুর নাম লেখ যা গয়না তৈরিতে লাগত। সোনা এবং রূপা।
‘আহত মুদ্রা’ কী দিয়ে তৈরি হত? সাধারণত রূপা বা তামা দিয়ে তৈরি হত।
একটি প্রাচীন ভারতীয় বন্দরের নাম লেখ যা গুজরাটে অবস্থিত ছিল। ভৃগুকচ্ছ (বারিগাজা বা ব্রোচ)।
ভারত থেকে রোমে রপ্তানি হত এমন একটি কৃষিজ পণ্যের নাম লেখ। গোলমরিচ।
সাতবাহন রাজারা কোন কোন ধাতুর মুদ্রা ব্যবহার করতেন? সিসা, পোতিন, তামা এবং রূপার মুদ্রা।
গুপ্তযুগের সোনার মুদ্রাকে কী বলা হত? দিনার।
‘বিষ্টি’ কী ছিল? এক ধরনের বেগার শ্রম বা বাধ্যতামূলক শ্রম।
প্রাচীন ভারতে গ্রামের পশুখাদ্যের জন্য যে জমি থাকত তাকে কী বলত? গোচর বা গোচারণ ভূমি।
একটি বিখ্যাত বাণিজ্য শহর যা দুটি প্রধান বাণিজ্যপথের সংযোগস্থলে ছিল। উজ্জয়িনী।
‘দক্ষিণাপথ’-এর প্রধান বাণিজ্যিক গুরুত্ব কী ছিল? উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের মধ্যে সংযোগ স্থাপন।
প্রাচীন ভারতে বণিকদের দলনেতাকে কী বলা হত? সার্থবাহ।
কোন বিদেশি পর্যটকের বিবরণ থেকে গুপ্তযুগের অর্থনীতির কথা জানা যায়? ফা-হিয়েনের বিবরণ থেকে।
প্রাচীনকালে ভারত মহাসাগরের সামুদ্রিক বাণিজ্য কোন বায়ুর উপর নির্ভরশীল ছিল? মৌসুমি বায়ুর উপর।
বস্ত্রশিল্পের জন্য দক্ষিণ ভারতের কোন অঞ্চল বিখ্যাত ছিল? তামিলনাড়ু (যেমন মাদুরাই, উরাইয়ুর)।
‘পোতকার’ কাদের বলা হত? যাঁরা জাহাজ বা নৌকা তৈরি করতেন।
মৌর্যযুগে খনিজ সম্পদের উপর কার নিয়ন্ত্রণ ছিল? রাষ্ট্রের বা রাজার।
প্রাচীন ভারতে হাতির দাঁতের কাজের জন্য কোন শহর বিখ্যাত ছিল? বিদিশা।
‘পণ’ কী ছিল? এক প্রকার প্রাচীন ভারতীয় মুদ্রা, সাধারণত তামার।
বণিকরা তাদের মালপত্র সুরক্ষিত রাখার জন্য কী করত? দলবদ্ধভাবে যাতায়াত করত এবং রক্ষী নিয়োগ করত।
ভূমিদান প্রথার ফলে কারা লাভবান হয়েছিল? ব্রাহ্মণ, পুরোহিত এবং অনেক সময় রাজকর্মচারীরা।
প্রাচীন ভারতের একটি প্রধান রপ্তানিযোগ্য বস্ত্র কী ছিল? সূক্ষ্ম সুতিবস্ত্র।

২ নম্বরের প্রশ্ন

প্রাচীন ভারতে কৃষির গুরুত্ব কেমন ছিল? দুটি প্রধান ফসল উল্লেখ কর। উত্তর: প্রাচীন ভারতে কৃষি ছিল অর্থনীতির মূল ভিত্তি এবং অধিকাংশ মানুষের জীবিকা। ধান এবং গম ছিল দুটি প্রধান উৎপন্ন ফসল।
প্রাচীন ভারতে সেচব্যবস্থা কেন প্রয়োজনীয় ছিল এবং কী ধরনের ব্যবস্থা ছিল? উত্তর: অনিশ্চিত বৃষ্টিপাতের কারণে কৃষিকাজের জন্য সেচব্যবস্থা জরুরি ছিল। কূপ, পুকুর, জলাধার এবং খাল কেটে সেচের ব্যবস্থা করা হত।
‘শ্রেণি’ বা ‘গিল্ড’গুলির প্রধান কাজ কী ছিল? উত্তর: গিল্ডগুলি কারিগর বা বণিকদের স্বার্থরক্ষা করত, উৎপাদিত দ্রব্যের গুণমান ও দাম নির্ধারণ করত, সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিত এবং অনেক সময় ব্যাঙ্কের মতো কাজও করত।
প্রাচীন ভারতে বস্ত্রশিল্পের বিবরণ দাও। উত্তর: ভারত সূক্ষ্ম তুলা ও রেশমবস্ত্রের জন্য বিখ্যাত ছিল। মথুরা, বারাণসী, বাংলা ও দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন কেন্দ্র বস্ত্র উৎপাদনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করত।
‘আহত মুদ্রা’ (Punch-marked coins) বলতে কী বোঝায়? এর প্রচলন কখন ছিল? উত্তর: বিভিন্ন প্রতীক বা চিহ্ন (যেমন—পাহাড়, গাছ, পশু) আঘাত করে বা ছেপে তৈরি করা অসম আকৃতির মুদ্রাগুলিকে আহত মুদ্রা বলে। এগুলি খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে মৌর্য যুগ পর্যন্ত ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল।
প্রাচীন ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যে তাম্রলিপ্ত বন্দরের ভূমিকা কী ছিল? উত্তর: তাম্রলিপ্ত ছিল পূর্ব ভারতের একটি প্রধান নদীবন্দর, যার মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও চিনের সঙ্গে ভারতের লাভজনক সামুদ্রিক বাণিজ্য চলত।
কুষাণ ও গুপ্তযুগের মুদ্রার মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখ। উত্তর: কুষাণরা বহুল পরিমাণে সোনার মুদ্রা চালু করে এবং মুদ্রায় বিদেশি প্রভাব (যেমন—রোমান) দেখা যায়। গুপ্তযুগের মুদ্রায় (বিশেষত সোনার দিনার) ভারতীয় শিল্পরীতির উৎকর্ষ এবং বিভিন্ন রাজার প্রতিকৃতি ও কার্যকলাপ ফুটে ওঠে।
প্রাচীন ভারতে ‘সিল্ক রুট’ বা রেশম পথের গুরুত্ব কী ছিল? উত্তর: রেশম পথ ছিল চিন থেকে মধ্য এশিয়া হয়ে ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত একটি বাণিজ্যপথ। এর একটি শাখা ভারতে প্রবেশ করেছিল, যার মাধ্যমে রেশম, মশলা ও অন্যান্য পণ্য আদানপ্রদান হত।
প্রাচীন ভারতে বণিকদের জীবনযাত্রা কেমন ছিল? উত্তর: বণিকরা সাধারণত ধনী ছিলেন এবং সমাজে তাঁদের সম্মান ছিল। তাঁরা দলবদ্ধভাবে (সার্থ) বাণিজ্যযাত্রা করতেন এবং অনেক সময় শ্রেণি বা নিগমের মাধ্যমে সংগঠিত থাকতেন।
গুপ্তযুগে ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা কেমন ছিল? উত্তর: গুপ্তযুগে ভূমিরাজস্ব ছিল রাষ্ট্রের আয়ের প্রধান উৎস। সাধারণত উৎপন্ন ফসলের এক-ষষ্ঠাংশ কর হিসেবে নেওয়া হত। জমি জরিপ করে কর নির্ধারণ করা হত।
‘গ্রামভোজক’ বা ‘গ্রামীক’-এর অর্থনৈতিক ভূমিকা কী ছিল? উত্তর: গ্রামের প্রধান হিসেবে গ্রামভোজক বা গ্রামীক কর আদায়, শান্তি রক্ষা এবং গ্রামীণ অর্থনীতির পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন। তিনি রাজা ও গ্রামবাসীদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতেন।
প্রাচীন ভারতে নগর ও গ্রামের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক কেমন ছিল? উত্তর: নগরগুলি ছিল শিল্প ও বাণিজ্যের কেন্দ্র, কিন্তু খাদ্যের জন্য তারা গ্রামের উপর নির্ভরশীল ছিল। গ্রাম থেকে খাদ্যশস্য ও কাঁচামাল নগরে আসত, এবং নগর থেকে শিল্পজাত দ্রব্য গ্রামে যেত।
সাতবাহন আমলে অর্থনীতির বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল? উত্তর: সাতবাহন আমলে কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের উন্নতি ঘটে। তাঁরা সিসা, পোতিন ও রূপার মুদ্রা প্রচলন করেন। গিল্ডগুলি শক্তিশালী ছিল এবং বৈদেশিক বাণিজ্যেও তাঁরা অংশ নিতেন।
‘পেরিপ্লাস অফ দি ইরিথ্রিয়ান সি’ গ্রন্থ থেকে ভারতের বাণিজ্য সম্পর্কে কী জানা যায়? উত্তর: এই গ্রন্থে প্রথম শতকের ভারত ও রোমান সাম্রাজ্যের মধ্যে সামুদ্রিক বাণিজ্য, ভারতের বিভিন্ন বন্দর (যেমন বারিগাজা, মুজিরিস), আমদানি ও রপ্তানিযোগ্য পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়।
প্রাচীন ভারতে লবণ কীভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক পণ্য ছিল? উত্তর: লবণ ছিল একটি অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্যপণ্য এবং এর উৎপাদন ও বাণিজ্যের উপর অনেক সময় রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ থাকত। এটি আয়ের একটি উৎসও ছিল।
গুপ্তযুগের অর্থনীতিকে ‘সুবর্ণ যুগ’-এর অর্থনীতি বলার কারণ কী? (সমালোচনামূলক দৃষ্টিতে) উত্তর: গুপ্তযুগে কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের উন্নতি এবং প্রচুর সোনার মুদ্রা প্রচলনের কারণে একে ‘সুবর্ণ যুগ’ বলা হয়। তবে এই সমৃদ্ধি সমাজের সকল স্তরে পৌঁছায়নি, সাধারণ কৃষক ও শ্রমিকদের অবস্থা খুব ভালো ছিল না।
ভূমিদান প্রথা কীভাবে প্রাচীন ভারতের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করেছিল? উত্তর: রাজারা ব্রাহ্মণ, পুরোহিত বা রাজকর্মচারীদের ভূমিদান করলে সেই জমির রাজস্ব তাঁরা পেতেন। এর ফলে একদিকে যেমন কৃষির বিস্তার ঘটত, তেমনই রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ রাজস্ব আয় কমত এবং একটি শক্তিশালী ভূস্বামী শ্রেণির উদ্ভব হত।
প্রাচীন ভারতে বিভিন্ন প্রকার কারিগরদের জীবনযাত্রা কেমন ছিল? উত্তর: কারিগররা সাধারণত নগরে বাস করতেন এবং গিল্ডের অধীনে কাজ করতেন। তাঁদের সামাজিক মর্যাদা খুব উঁচু না হলেও, অর্থনৈতিকভাবে তাঁরা সচ্ছল ছিলেন। দক্ষতা বংশানুক্রমে অর্জিত হত।
মৌর্য পরবর্তী যুগে বৈদেশিক বাণিজ্যের উত্থানের কারণ কী ছিল? উত্তর: এই সময়ে মধ্য এশিয়া ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে কুষাণদের মতো রাজনৈতিক শক্তির উত্থান, রোমান সাম্রাজ্যের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বাণিজ্যিক যোগাযোগ স্থাপন এবং রেশম পথের সক্রিয়তা বৈদেশিক বাণিজ্যকে উৎসাহিত করেছিল।
খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের শুরুতে ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থার একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র দাও। উত্তর: এই সময়ে গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর উত্তর ভারতে একাধিক ছোট রাজ্যের সৃষ্টি হয়। তবে কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ অর্থনীতি এবং বিভিন্ন হস্তশিল্প প্রচলিত ছিল। বৈদেশিক বাণিজ্যে কিছুটা ভাটা পড়লেও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য সচল ছিল।

Leave a Comment

Ask