ভারত ও সমকালীন বহির্বিশ্ব’ থেকে ভারতের সঙ্গে পারস্য, গ্রিস, রোম, চিন, মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রাচীন সম্পর্ক সম্পর্কিত ২৫টি ১ নম্বরের এবং ২০টি ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর।
১ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর
ভারতের উত্তর-পশ্চিমে প্রথম কোন বিদেশি শক্তি সাম্রাজ্য বিস্তার করে? | পারস্যের একামেনিড বা হখামনিষীয় বংশ। |
---|---|
আলেকজান্ডার কোথাকার রাজা ছিলেন? | গ্রিসের ম্যাসিডনের রাজা ছিলেন। |
ইন্দো-গ্রিক রাজারা কোথায় রাজত্ব করতেন? | ভারতের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে। |
ভারতের কোন কোন পণ্য রোমানদের খুব প্রিয় ছিল? | মশলা (বিশেষত গোলমরিচ) ও সূক্ষ্ম বস্ত্র। |
‘পেরিপ্লাস অফ দি ইরিথ্রিয়ান সি’ কী ধরনের গ্রন্থ? | এটি ভারত মহাসাগরের বাণিজ্য বিষয়ক একটি গ্রিক বিবরণী। |
কুষাণরা আদিতে কোন জাতিগোষ্ঠীর শাখা ছিল? | ইউয়ে-ঝি জাতিগোষ্ঠীর। |
রেশম পথের উপর কোন ভারতীয় রাজবংশের নিয়ন্ত্রণ ছিল? | কুষাণ রাজবংশের। |
বৌদ্ধধর্মের কোন শাখাটি চিনে বেশি জনপ্রিয় হয়েছিল? | মহাযান শাখা। |
ফা-হিয়েন কার আমলে ভারতে আসেন? | গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আমলে। |
হিউয়েন সাঙ কোন ভারতীয় রাজার রাজসভার বর্ণনা দিয়েছেন? | হর্ষবর্ধনের। |
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে প্রাচীন ভারতীয়রা কী নামে ডাকত? | সুবর্ণভূমি বা সুবর্ণদ্বীপ। |
কম্বোডিয়ার আঙ্কোরভাট মন্দির কোন ধর্মের স্থাপত্য? | মূলত হিন্দু (বিষ্ণু) মন্দির, পরে বৌদ্ধ প্রভাব। |
গান্ধার শিল্পের প্রধান বিষয়বস্তু কী ছিল? | বুদ্ধ ও বোধিসত্ত্বদের মূর্তি। |
খরোষ্ঠী লিপি কোন দিক থেকে লেখা হত? | ডান দিক থেকে বাম দিকে। |
‘যবনিকা’ শব্দের উৎপত্তি কোন দেশ থেকে? | গ্রিস বা যবন দেশ থেকে। |
প্রাচীনকালে রোম থেকে ভারতে কী আমদানি করা হত? | সোনা, রুপা, মদ, কাঁচের জিনিস। |
বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্য অশোক কাদের বিদেশে পাঠিয়েছিলেন? | ধর্মমহামাত্র ও রাজকর্মচারীদের, এমনকি নিজ পুত্র-কন্যাকেও। |
ভারতের কোন জ্ঞান পশ্চিমে আরবদের মাধ্যমে পৌঁছায়? | গণিত (শূন্য, দশমিক), জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসাবিদ্যা। |
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারতীয় লিপির একটি উদাহরণ দাও। | পালি বা সংস্কৃত প্রভাবিত ব্রাহ্মী লিপি। |
একটি ইন্দো-গ্রিক রাজার নাম লেখ। | মিনান্দার। |
কুষাণ যুগের একটি প্রধান শিল্পকেন্দ্রের নাম লেখ। | মথুরা বা গান্ধার। |
কোন চিনা পরিব্রাজক নালন্দায় দীর্ঘদিন ছিলেন? | হিউয়েন সাঙ। |
ভারতের কোন উপকূল দিয়ে রোমের সঙ্গে বেশি বাণিজ্য চলত? | পশ্চিম উপকূল। |
চিন থেকে ভারতে আসা একটি প্রধান আমদানি দ্রব্য কী ছিল? | রেশম। |
সুমাত্রা ও জাভায় কোন ভারতীয় রাজবংশের প্রভাব দেখা যায়? | শৈলেন্দ্র বংশ (পরবর্তীকালে)। |
২ নম্বরের প্রশ্ন
প্রাচীনকালে ভারতের সঙ্গে পারস্যের (ইরান) সম্পর্ক কেমন ছিল? | উত্তর: পারস্যের একামেনিড সাম্রাজ্য ভারতের উত্তর-পশ্চিমাংশ দখল করে নিয়েছিল, যার ফলে স্থাপত্য ও লিপিতে পারসিক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। বাণিজ্যিক সম্পর্কও ছিল। |
---|---|
আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের দুটি স্বল্পমেয়াদী ও দুটি দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল লেখ। | উত্তর: স্বল্পমেয়াদী: উত্তর-পশ্চিম ভারতে রাজনৈতিক অস্থিরতা, কিছু গ্রিক বসতি স্থাপনের ঘটনা। দীর্ঘমেয়াদী: গ্রিক ও ভারতীয় সংস্কৃতির মিশ্রণ, নতুন বাণিজ্যপথের উন্মোচন। |
ইন্দো-গ্রিক রাজাদের মুদ্রার বৈশিষ্ট্য কী ছিল? এগুলি কেন গুরুত্বপূর্ণ? | উত্তর: ইন্দো-গ্রিক মুদ্রায় একদিকে গ্রিক ও অন্যদিকে প্রাকৃত (খরোষ্ঠী বা ব্রাহ্মী লিপিতে) লেখা থাকত এবং রাজার প্রতিকৃতি থাকত। এগুলি থেকে রাজাদের নাম ও সময়কাল জানা যায়। |
ভারতের সঙ্গে রোমান বাণিজ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল? | উত্তর: এই বাণিজ্য ছিল মূলত সমুদ্রভিত্তিক এবং ভারতের অনুকূলে। ভারত থেকে মশলা, বস্ত্র, মুক্তা রপ্তানি হত এবং রোম থেকে সোনা, মদ, কাঁচ আমদানি হত। |
‘সিল্ক রুট’ বা রেশম পথের বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব কী ছিল? | উত্তর: রেশম পথ শুধু চিন থেকে রেশম পরিবহনের পথই ছিল না, এটি পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে বিভিন্ন পণ্য, ধারণা, ধর্ম (যেমন বৌদ্ধধর্ম) ও সংস্কৃতির আদানপ্রদানের মাধ্যমও ছিল। |
চিনের সঙ্গে ভারতের প্রাচীন সম্পর্ক কেমন ছিল? ধর্ম ও বাণিজ্যের ভূমিকা লেখ। | উত্তর: চিনের সঙ্গে ভারতের প্রধানত বৌদ্ধধর্ম ও রেশম বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। বহু চিনা পরিব্রাজক ভারতে আসেন এবং ভারতীয়রাও চিনে যান। |
ফা-হিয়েন ও হিউয়েন সাঙ-এর ভারত ভ্রমণের উদ্দেশ্য কী ছিল? তাদের বিবরণ কেন গুরুত্বপূর্ণ? | উত্তর: তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ সংগ্রহ, বৌদ্ধতীর্থ দর্শন এবং বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কে জ্ঞানার্জন। তাদের ভ্রমণ বিবরণী তৎকালীন ভারতের সমাজ, অর্থনীতি, ধর্ম ও শাসনব্যবস্থা জানার মূল্যবান উৎস। |
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারতীয় সংস্কৃতি কীভাবে বিস্তার লাভ করেছিল? | উত্তর: বাণিজ্য, ধর্মপ্রচার (হিন্দু ও বৌদ্ধ) এবং ভারতীয় রাজপুত্র ও বণিকদের বসতি স্থাপনের মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারতীয় ভাষা, লিপি, ধর্ম, শিল্পকলা ও রাজনৈতিক আদর্শ বিস্তার লাভ করে। |
‘সুবর্ণভূমি’ বা ‘সুবর্ণদ্বীপ’ বলতে কী বোঝায়? এই অঞ্চলের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কেমন ছিল? | উত্তর: প্রাচীনকালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিকে (যেমন বার্মা, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া) সুবর্ণভূমি বা সুবর্ণদ্বীপ বলা হত। এই অঞ্চলের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক ছিল। |
গান্ধার শিল্পরীতির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী? | উত্তর: গান্ধার শিল্পরীতিতে ভারতীয় বিষয়বস্তু (প্রধানত বুদ্ধ ও বোধিসত্ত্ব) গ্রিক-রোমান শিল্পশৈলীতে রূপায়িত হত। মূর্তির চুল কোঁকড়ানো, পোশাক ঢেউখেলানো এবং মুখমণ্ডলে বাস্তবতার ছাপ থাকত। |
প্রাচীনকালে ভারতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান কীভাবে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল? | উত্তর: আরব বণিক ও পণ্ডিতদের মাধ্যমে ভারতের গণিত (শূন্য, দশমিক), জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং দর্শন সংক্রান্ত জ্ঞান প্রথমে পশ্চিম এশিয়া ও পরে ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছিল। |
সমকালীন বিশ্বে ভারতের পরিচিতি কেমন ছিল? (খ্রিস্টীয় সপ্তম শতক পর্যন্ত) | উত্তর: ভারত মশলা, বস্ত্র, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও দর্শনের দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল। রোমান সাম্রাজ্য, চিন, মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে তার বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ ছিল। |
ভারতের পশ্চিম উপকূলের বন্দরগুলি বৈদেশিক বাণিজ্যে কেন গুরুত্বপূর্ণ ছিল? | উত্তর: পশ্চিম উপকূলের বন্দরগুলি (যেমন ভৃগুকচ্ছ, সোপারা, মুজিরিস) আরব সাগর হয়ে রোমান সাম্রাজ্য, মিশর ও পারস্যের সঙ্গে সরাসরি সামুদ্রিক বাণিজ্যের সুবিধা প্রদান করত। |
কুষাণ যুগকে কেন ভারত ও মধ্য এশিয়ার মধ্যে সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধনের যুগ বলা হয়? | উত্তর: কুষাণ সাম্রাজ্য ভারত ও মধ্য এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে থাকায় এই দুই অঞ্চলের মধ্যে বাণিজ্য, শিল্পকলা (গান্ধার শিল্প) এবং ধর্মের (বৌদ্ধধর্ম) আদানপ্রদান সহজ হয়েছিল। |
অশোক কীভাবে বৌদ্ধধর্মকে বিশ্বধর্মে পরিণত করতে সাহায্য করেছিলেন? | উত্তর: অশোক বিভিন্ন দেশে (যেমন শ্রীলঙ্কা, সিরিয়া, মিশর) ধর্মদূত পাঠিয়ে এবং শিলালিপির মাধ্যমে অহিংসা ও মৈত্রীর বাণী প্রচার করে বৌদ্ধধর্মকে ভারতের বাইরে জনপ্রিয় করে তোলেন। |
খরোষ্ঠী লিপির উদ্ভব ও ব্যবহার সম্পর্কে লেখ। | উত্তর: খরোষ্ঠী লিপির উদ্ভব উত্তর-পশ্চিম ভারতে পারসিক সাম্রাজ্যের আরামাইক লিপি থেকে হয়েছিল বলে মনে করা হয়। এটি ডান দিক থেকে বাম দিকে লেখা হত এবং কুষাণ যুগে এর ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়। |
প্রাচীন ভারতীয় সমাজে বিদেশি প্রভাব কতটা গৃহীত হয়েছিল? উদাহরণ দাও। | উত্তর: প্রাচীন ভারতীয় সমাজ বিদেশি প্রভাব গ্রহণে বিমুখ ছিল না। গ্রিক জ্যোতির্বিদ্যা, গান্ধার শিল্পে গ্রিক-রোমান প্রভাব, ‘যবনিকা’ শব্দের ব্যবহার এর উদাহরণ। |
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারতীয় ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রসারের দুটি কারণ লেখ। | উত্তর: লাভজনক বাণিজ্য সম্পর্কের পাশাপাশি ভারতীয় ধর্মপ্রচারক, পণ্ডিত ও রাজপুত্রদের সেই অঞ্চলে গিয়ে বসতি স্থাপন এবং স্থানীয় শাসকদের ভারতীয় সংস্কৃতি গ্রহণে আগ্রহ এর প্রধান কারণ ছিল। |
‘মিলিন্দপঞ্ঝ’ গ্রন্থটির বিষয়বস্তু কী? | উত্তর: এটি ইন্দো-গ্রিক রাজা মিনান্দার এবং বৌদ্ধ দার্শনিক নাগসেনের মধ্যে বৌদ্ধধর্মের বিভিন্ন জটিল প্রশ্ন নিয়ে আলোচনার একটি সংকলন। |
প্রাচীন ভারতের সঙ্গে রোমান বাণিজ্যের পতনের কারণ কী ছিল? | উত্তর: রোমান সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা ও পতন, হূণ আক্রমণ এবং নতুন বাণিজ্যপথের উত্থান ধীরে ধীরে ভারতের সঙ্গে রোমান বাণিজ্যের অবনতি ঘটায়। |