WBBSE Class VII এর ভূগোল বিষয় অর্থাৎ আমাদের পৃথিবী বিষয়টির প্রথম অধ্যায় পৃথিবীর পরিক্রমণ । এই অধ্যায়টির সারমর্ম খুব ছোট করে আলোচনা করা হল। স্কুলের পাঠ্যবই, স্কুলে শেষ করার পর কয়েকবার এই সারমর্মটি পড়াশোনা কর। তাহলে মুল বিসয়গুলি পুনরুদ্রেগ হবে এবং খুব প্রয়োজনীয় তথ্যগুলি খুব দ্রুত পড়াও হয়ে যাবে ।
মহাকর্ষ
কোনো বস্তুকে ছেড়ে দিলে তা মাটিতে পড়ে যায়, কারণ পৃথিবী তার কেন্দ্রের দিকে টানে। পৃথিবীর এই আকর্ষণ বল হলো মহাকর্ষ। শুধু পৃথিবী নয়, মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুই একে অপরকে আকর্ষণ করে। এই টানাটানির খেলায় যার ভর বেশি এবং যে যত কাছে থাকে, তার আকর্ষণ তত বেশি হয়। পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরে কারণ সূর্য পৃথিবীর তুলনায় 13 লক্ষ গুণ বড় এবং কাছের তারা।
পৃথিবীর কক্ষপথে ঘূর্ণন
খুঁটির সাথে দড়ি বেঁধে ঘোরার মতো, পৃথিবীও সূর্যের চারিদিকে ঘোরে। যদি পৃথিবী স্থির থাকত, তাহলে সূর্যের আকর্ষণে সোজা সূর্যের ওপর গিয়ে পড়ত। কিন্তু সৃষ্টির সময় পৃথিবী সূর্য থেকে দূরে সরে যায় এবং তারপর থেকে সূর্যের আকর্ষণে ঘুরতে থাকে। এইভাবেই চাঁদ পৃথিবীর চারিদিকে ঘোরে এবং সূর্য তার সৌরজগতের গ্রহ-উপগ্রহ নিয়ে আকাশগঙ্গার কেন্দ্রের চারিদিকে ঘোরে।
পৃথিবীর পরিক্রমণ গতি বা বার্ষিক গতি
পৃথিবী শুধু সূর্যের চারিদিকে ঘোরে না, লাটুর মতো নিজের অক্ষের চারিদিকেও ঘোরে। নিজের অক্ষের চারিদিকে একপাক ঘুরতে পৃথিবীর সময় লাগে 24 ঘণ্টা, একে আবর্তন বলে। যে কল্পিত রেখার চারিদিকে পৃথিবী আবর্তন করে, সেটাই পৃথিবীর অক্ষ। এই অক্ষের দুটি প্রান্ত হলো মেরু – উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু। দুই মেরুবিন্দু থেকে সমান দূরে পৃথিবীর মাঝ বরাবর হলো বিষুবরেখা বা নিরক্ষবৃত্ত।
পৃথিবী নিজ অক্ষের ওপর আবর্তন করতে করতে, উপবৃত্তাকার কক্ষপথে পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে প্রায় 365 দিনে সূর্যের চারিদিকে ঘোরে, একে পরিক্রমণ গতি বা বার্ষিক গতি বলে। এর বেগ সেকেন্ডে প্রায় 30 কিমি।
কোনো বস্তুকে বেশি জোরে ছুঁড়লে তা পৃথিবীর মহাকর্ষীয় আকর্ষণ কাটিয়ে মহাশূন্যে চলে যেতে পারে। প্রতি সেকেন্ডে 11.2 কিমি গতিবেগে ছুঁড়তে পারলে (একে মুক্তিবেগ বলে) সেটি আর নীচে না পড়ে পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরতে থাকবে। রকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা হয় এই মুক্তিবেগে।
পৃথিবীর কক্ষপথ
পৃথিবী প্রায় 15 কোটি কিমি দূর থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। যে পথে পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, সেটাই পৃথিবীর কক্ষপথ। এই কক্ষপথ মহাশূন্যে যে কাল্পনিক সমতলে অবস্থিত, সেটাই ‘কক্ষতল’।
বিজ্ঞানী কেপলারের প্রথম সূত্র অনুযায়ী, প্রতিটি গ্রহ উপবৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে এবং সূর্য ওই উপবৃত্তের একটি ফোকাসে থাকে। পৃথিবীর কক্ষপথ প্রায় বৃত্তের মতোই।
উপবৃত্ত আঁকার জন্য একটি পেনসিল, দুটি পিন ও সুতো লাগবে। সুতোর লুপ বানিয়ে পিন দুটিকে কাগজের উপর আটকে লুপের ভিতরে পেনসিল দিয়ে টানটান করে ঘুরালে উপবৃত্ত তৈরি হবে।
পৃথিবীর পরিক্রমণ ও দূরত্ব
উপবৃত্তাকার কক্ষপথের একটি ফোকাসে সূর্য অবস্থান করে। তাই সূর্য প্রদক্ষিণের সময় সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সবসময় সমান থাকে না।
জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত পৃথিবী সূর্য থেকে দূরে সরে যায়। ৪ জুলাই সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সবচেয়ে বেশি হয় (প্রায় 15 কোটি 20 লক্ষ কিমি), একে অপসূর অবস্থান বলে। জুলাই থেকে দূরত্ব কমতে থাকে। 3 rd জানুয়ারি দূরত্ব সবচেয়ে কম হয় (প্রায় 14 কোটি 70 লক্ষ কিমি), একে অনুসূর অবস্থান বলে।
প্রাকৃতিক ঘড়ি
সময় মাপার তিনটি প্রাকৃতিক উপায় আছে – 24 ঘণ্টায় দিন-রাতের পর্যায়ক্রম, চাঁদের পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ (প্রায় 28 দিনে, চান্দ্রমাস) এবং পৃথিবীর সূর্য পরিক্রমণ (প্রায় 365 দিনে, সৌর বছর বা বার্ষিক গতি)।
সূর্যঘড়ি বানানোর জন্য একটি সমতল জায়গায় কাগজ বিছিয়ে মাঝখানে লম্বা লাঠি পুঁতে দিতে হবে। রোদের দিনে লাঠির ছায়া এক ঘণ্টা পর পর দাগ দিয়ে সময় লিখে রাখলে সূর্যঘড়ি তৈরি হবে।
Also Read:
অধিবর্ষ কি?
আমাদের ক্যালেন্ডারের এক বছর (365 দিন) আর পৃথিবীর একবার সূর্য পরিক্রমণের সময় (৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড) একই হওয়া উচিত। হিসাবের সুবিধার জন্য 365 দিনে একবছর ধরা হয়। ফলে প্রতিবছর ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড সময় বেশি থেকে যায়। এই হিসাব ঠিক রাখার জন্য প্রতি চার বছর অন্তর একটি দিন যোগ করা হয়, যা ফেব্রুয়ারী মাসে যোগ হয়ে মাসটি ২৯ দিনের হয় এবং বছরটি 366 দিনের হয়। একে অধিবর্ষ বলে।
যে বছরকে ‘4’ দিয়ে ভাগ করলে ভাগশেষ থাকে না, সেই বছর অধিবর্ষ। তবে শতাব্দী বছরগুলোর জন্য নিয়ম আলাদা, সেগুলোকে ‘400’ দিয়ে ভাগ করলে ভাগশেষ না থাকলে তবেই সেটি অধিবর্ষ হবে।
ঋতু পরিবর্তনের কারণ
সূর্য থেকে পৃথিবীতে প্রতি মুহূর্তে একই পরিমাণে আলো ও তাপ এলেও সারাবছর ধরে গরম-ঠান্ডা আলাদা হয়। কারণ পৃথিবী নিজ অক্ষের ওপর হেলানোভাবে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। ফলে কক্ষপথের এক একটা জায়গায় পৃথিবীর এক একটা গোলার্ধ সূর্যের দিকে বেশি ঝুঁকে থাকে।
সূর্যরশ্মি তির্যকভাবে পড়লে বেশি জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে, কিন্তু কম উত্তপ্ত করে। লম্বভাবে পড়লে কম জায়গাকে বেশি উত্তপ্ত করে।
যখন উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে বেশি ঝুঁকে থাকে, তখন উত্তর গোলার্ধে দিন বড়ো ও রাত ছোটো হতে থাকে, অর্থাৎ গ্রীষ্মকাল। দক্ষিণ গোলার্ধে তখন শীতকাল। আবার যখন দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের দিকে ঝুঁকে থাকে, তখন উত্তর গোলার্ধে শীতকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল।
সূর্যের বার্ষিক আপাতগতি/রবিমার্গ কি?
সারাবছর সূর্য আকাশের একই জায়গায় ওঠে না। শীতকালে পূর্ব আকাশে একটু দক্ষিণ দিকে ও গ্রীষ্মকালে একটু উত্তর দিকে ওঠে। পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘোরার জন্য সূর্যকে পূর্ব থেকে পশ্চিমে যেতে মনে হয়। এটি সূর্যের দৈনিক আপাত গতি। হেলানো অক্ষের জন্য পৃথিবী কক্ষপথে এমনভাবে ঘোরে যে বছরের বিভিন্ন সময়ে বিষুবরেখা, কর্কটক্রান্তি রেখা (23½° উত্তর) ও মকরক্রান্তি রেখায় (23½° দক্ষিণ) সূর্যের লম্ব রশ্মি পড়ে। ফলে মনে হয় সূর্য বিষুবরেখা থেকে উত্তরে কর্কটক্রান্তি ও দক্ষিণে মকরক্রান্তি পর্যন্ত চলাচল করে। এটি সূর্যের বার্ষিক আপাতগতি বা রবিমার্গ।
বছরে দুটি দিন (21 মার্চ ও 23 সেপ্টেম্বর) বিষুবরেখায় সূর্যের লম্ব রশ্মি পড়ে। 21 জুন কর্কটক্রান্তি ও 22 ডিসেম্বর মকরক্রান্তিতে লম্ব রশ্মি পড়ে। 22 ডিসেম্বর থেকে 21 জুন পর্যন্ত সূর্যের উত্তরমুখী আপাতগতি হলো উত্তরায়ণ। 21 জুন থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণমুখী আপাতগতি হলো দক্ষিণায়ণ।
বিষুব (Equinox) কি?
21 মার্চ তারিখে বিষুবরেখায় লম্বভাবে সূর্যরশ্মি পড়ে। এই দিন সর্বত্র দিন-রাত্রি সমান (12 ঘণ্টা) হয়। একে বিষুব বলে। উত্তর গোলার্ধে এই সময় বসন্তকাল, তাই একে মহাবিষুব বলে।
গ্রীষ্মকাল
21 মার্চের পর থেকে উত্তর গোলার্ধে দিন বড়ো ও রাত ছোটো হতে থাকে। 21 জুন কর্কটক্রান্তিতে লম্ব রশ্মি পড়ে। এই দিন উত্তর গোলার্ধে দিন সবচেয়ে বড়ো ও দক্ষিণ গোলার্ধে সবচেয়ে ছোটো হয়। একে কর্কটসংক্রান্তি বলে।
শরৎকাল
21 জুনের পর সূর্যের দক্ষিণায়ন শুরু হয়। 23 সেপ্টেম্বর তারিখে বিষুবরেখায় লম্ব রশ্মি পড়ে। এই দিনও দিন-রাত সমান হয়। উত্তর গোলার্ধে এই সময় শরৎকাল, তাই একে জলবিষুব বলে।
শীতকাল
23 সেপ্টেম্বরের পর থেকে সূর্যের লম্ব রশ্মি দক্ষিণ গোলার্ধে পড়তে থাকে। 22 ডিসেম্বর মকরক্রান্তিতে লম্ব রশ্মি পড়ে। এই দিন দক্ষিণ গোলার্ধে দিন সবচেয়ে বড়ো ও উত্তর গোলার্ধে সবচেয়ে ছোটো হয়। একে মকরসংক্রান্তি বলে।
মেরু অঞ্চলে দিন-রাত্রি
মেরুবৃত্তে (66½° উত্তর ও দক্ষিণ) মার্চ থেকে জুলাই উত্তর গোলার্ধে সূর্য দিগন্তের নীচে নামে না, 24 ঘণ্টাই দিন থাকে। সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারী দক্ষিণ গোলার্ধে একই ঘটনা ঘটে।
মার্চ থেকে জুন কানাডা, ডেনমার্ক, আলাস্কা, নরওয়ে, সুইডেন, আইসল্যান্ড থেকে রাতেও সূর্য দেখা যায়, একে মধ্যরাত্রির সূর্য বলে।
সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারী সুমেরুবৃত্তে সূর্য ওঠে না, 24 ঘণ্টাই অন্ধকার থাকে। মার্চ থেকে জুন কুমেরুবৃত্তেও একই অবস্থা হয়। সুমেরু ও কুমেরুতে একটানা 6 মাস দিন ও 6 মাস রাত থাকে।
ঋতুবৈচিত্র্য মানুষের জীবন, সংস্কৃতি, কৃষিকাজ, উৎসব ইত্যাদির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পৃথিবীর ঘূর্ণন ও ঋতু পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ তারিখ
তারিখ | ঘটনা |
---|---|
21 মার্চ | মহাবিষুব |
21 জুন | কর্কটসংক্রান্তি |
23 সেপ্টেম্বর | জলবিষুব |
22 ডিসেম্বর | মকরসংক্রান্তি |
পৃথিবীর বিভিন্ন অবস্থান ও তার প্রভাব
অবস্থান | ঢালের কোণ | প্রভাব |
---|---|---|
বিষুবরেখা | 0 ডিগ্রি | সারা বছর দিন-রাত সমান। সূর্যের আলো সরাসরি পড়ে। |
কর্কটক্রান্তি রেখা (23.5° উত্তর) | সূর্যের দিকে সর্বোচ্চ ঢাল | উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল, দক্ষিণ গোলার্ধে শীতকাল। |
মকরক্রান্তি রেখা (23.5° দক্ষিণ) | সূর্যের দিকে সর্বোচ্চ ঢাল | দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল, উত্তর গোলার্ধে শীতকাল। |
ধ্রুববৃত্ত (66.5° উত্তর ও দক্ষিণ) | সূর্যের দিকে সর্বোচ্চ ঢাল | 6 মাস দিন, 6 মাস রাত। |
পৃথিবীর কক্ষপথ এবং তার প্রভাব
অবস্থান | দূরত্ব | প্রভাব |
---|---|---|
অনুসূর | সূর্যের সবচেয়ে কাছে | উত্তর গোলার্ধে শীতকাল, দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল। |
অপসূর | সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরে | উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল, দক্ষিণ গোলার্ধে শীতকাল। |
পৃথিবীর ঘূর্ণন এবং তার প্রভাব
ঘূর্ণন | প্রভাব |
---|---|
পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে | দিন-রাত, পৃথিবীর আকার চ্যাপ্টা |