মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের, অষ্টম শ্রেণির আমাদের পৃথিবী অর্থাৎ ভূগোল বিষয়ের চতুর্থ অধ্যায় মেঘ-বৃষ্টি (Clouds and Rainfall)। এই অধ্যায়ের সারাংশ এখানে দেওয়া হল।
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে জলের বিভিন্ন অবস্থা এবং তার গতিবিধি আমাদের আবহাওয়া ও জলবায়ুর এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই অধ্যায়ে আমরা বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি থেকে শুরু করে মেঘের সৃষ্টি, তাদের শ্রেণিবিভাগ এবং বিভিন্ন প্রকার বৃষ্টিপাতের কারণ ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানব। এই বিষয়গুলি প্রকৃতির জলচক্রের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ এবং জীবজগতের অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য।
বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প ও আর্দ্রতা:
ভূপৃষ্ঠের জলভাগ (সমুদ্র, নদী, হ্রদ) থেকে বাষ্পীভবন, উদ্ভিদ থেকে প্রস্বেদন এবং বরফের ঊর্ধপাতনের মাধ্যমে জলীয় বাষ্প বায়ুমণ্ডলে মেশে। এই জলীয় বাষ্পই মেঘ ও বৃষ্টির মূল উৎস।
আর্দ্রতা (Humidity): বায়ুতে উপস্থিত জলীয় বাষ্পের পরিমাণকে আর্দ্রতা বলে।
পরম আর্দ্রতা: নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে উপস্থিত জলীয় বাষ্পের প্রকৃত ভর (গ্রাম/ঘনমিটার)।
আপেক্ষিক আর্দ্রতা: নির্দিষ্ট উষ্ণতায় নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ুতে উপস্থিত জলীয় বাষ্প এবং ঐ উষ্ণতায় ঐ বায়ুর সর্বোচ্চ জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতার অনুপাত, যা শতাংশে (%) প্রকাশ করা হয়।
সম্পৃক্ত বায়ু (Saturated Air): যখন বায়ু নির্দিষ্ট উষ্ণতায় সর্বাধিক পরিমাণ জলীয় বাষ্প ধারণ করে, তখন তাকে সম্পৃক্ত বায়ু বলে (আপেক্ষিক আর্দ্রতা ১০০%)।
শিশিরাঙ্ক (Dew Point): যে উষ্ণতায় বায়ু জলীয় বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত হয় এবং ঘনীভবন শুরু হয়, তাকে শিশিরাঙ্ক বলে।
ঘনীভবন (Condensation): জলীয় বাষ্পের জলকণা বা বরফকণায় পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ঘনীভবন বলে। এর জন্য বায়ুর তাপমাত্রা শিশিরাঙ্কে পৌঁছানো এবং বায়ুতে ধূলিকণা, লবণ কণার মতো ঘনীভবন কেন্দ্রের (Condensation Nuclei) উপস্থিতি প্রয়োজন।
মেঘ (Clouds):
ঊর্ধ্বাকাশে ভাসমান অতি ক্ষুদ্র জলকণা বা তুষারকণার সমষ্টিই হলো মেঘ। উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু ওপরে উঠে প্রসারিত ও শীতল হলে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘের সৃষ্টি করে। মেঘকে তাদের উচ্চতা ও আকৃতি অনুসারে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়:
বেশি উচ্চতার মেঘ (High Clouds): সিরাস (Cirrus), সিরোকিউমুলাস (Cirrocumulus), সিরোস্ট্রাটাস (Cirrostratus)। এগুলি মূলত বরফকণা দিয়ে তৈরি।
মাঝারি উচ্চতার মেঘ (Medium Clouds): অল্টোকিউমুলাস (Altocumulus), অল্টোস্ট্রাটাস (Altostratus)।
কম উচ্চতার মেঘ (Low Clouds): স্ট্রাটাস (Stratus), স্ট্রাটোকিউমুলাস (Stratocumulus), নিম্বোস্ট্রাটাস (Nimbostratus – বর্ষার মেঘ)।
উল্লম্ব মেঘ (Clouds with great vertical extent): কিউমুলাস (Cumulus) এবং কিউমুলোনিম্বাস (Cumulonimbus – বজ্রগর্ভ মেঘ, ঝড়বৃষ্টি ঘটায়)।
অধঃক্ষেপণ (Precipitation):
মেঘ থেকে জলকণা বা বরফকণা বিভিন্ন রূপে ভূপৃষ্ঠে পতিত হলে তাকে অধঃক্ষেপণ বলে। জলকণা বা বরফকণা যথেষ্ট ভারী হলেই অভিকর্ষের টানে নীচে নেমে আসে।
বৃষ্টিপাত (Rainfall):
বৃষ্টিপাত হলো ০.৫ মিলিমিটার বা তার চেয়ে বড় ব্যাসের জলকণার পতন। এটি বৃষ্টিমাপক যন্ত্রের (Rain gauge) সাহায্যে পরিমাপ করা হয়। বৃষ্টিপাত প্রধানত তিন প্রকারের:
পরিচলন বৃষ্টি (Convectional Rainfall): ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হলে বায়ু হালকা হয়ে ওপরে ওঠে, শীতল ও ঘনীভূত হয়ে প্রধানত কিউমুলোনিম্বাস মেঘ সৃষ্টি করে এবং বজ্রবিদ্যুৎসহ মুষলধারে বৃষ্টিপাত ঘটায়। নিরক্ষীয় অঞ্চলে এই বৃষ্টি বেশি দেখা যায়।
শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টি (Orographic Rainfall): জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু পর্বতে বাধা পেয়ে ওপরে উঠতে বাধ্য হলে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে পর্বতের প্রতিবাত ঢালে (Windward side) প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। এর বিপরীতে অনুবাত ঢালে (Leeward side) বৃষ্টি কম হওয়ায় তাকে ‘বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল’ (Rain shadow area) বলে।
ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টি (Cyclonic Rainfall): ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে নিম্নচাপের কারণে উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু ওপরে উঠে ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। এছাড়াও, উষ্ণ ও শীতল বায়ুপ্রবাহের মিলনস্থলে (সীমান্ত) উষ্ণ বায়ু হালকা হওয়ায় শীতল বায়ুর ওপর দিয়ে উঠে বৃষ্টিপাত ঘটায় (সীমান্ত বৃষ্টি)।