Concept of History Class VIII | ইতিহাসের ধারণা, অষ্টম শ্রেণি

WBBSE এর Class VIII এর History বিষয়টির প্রথম অধ্যায়  “ইতিহাসের ধারণা”। এই অধ্যায়ে আমরা জানব  ইতিহাস কি ?  ইতিহাসের উপাদান সমন্ধে, ইতিহাসের গুরুত্ব,  ও ইতিহাসের কাল বিভাজন যেমন-  প্রাক্‌-ইতিহাস, প্রায়-ইতিহাস, ও ঐতিহাসিক যুগ । যেহেতু বিশেষ ভৌগলিক সীমানার ভিন্ন হয় তাই  বিশেষ করে ভারতের  কাল বিভাজন সমন্ধে জানব। এছাড়াও ভারতবর্ষের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপাদানের ভূমিকা সম্পর্কেও  আলোচনা করা হয়েছে।

ইতিহাস কী?

এই অধ্যায়ের শুরুতে ‘ইতিহাস’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ‘ইতিহ’ (এইরূপ ছিল) এবং ‘আস’ (ঘটেছিল) শব্দ দুটি মিলে ‘ইতিহাস’ শব্দটি তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ, ইতিহাস হল অতীতের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলির বিবরণ। কিন্তু সব ঘটনাই ইতিহাস নয়। যে ঘটনাগুলি মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে, যে ঘটনাগুলি থেকে শিক্ষা নেওয়া যায়, সেগুলিকেই ঐতিহাসিক ঘটনা বলা হয়।

ইতিহাসের উপাদান:

ইতিহাস রচনার জন্য ঐতিহাসিকরা বিভিন্ন উপাদানের উপর নির্ভর করেন। এই উপাদানগুলিকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়: লিখিত উপাদান এবং অলিখিত উপাদান।

লিখিত উপাদান: লিখিত উপাদানের মধ্যে পড়ে বিভিন্ন সাহিত্য, নথিপত্র, চিঠিপত্র, শিলালিপি, তাম্রলিপি, মুদ্রা, জীবনী, আত্মজীবনী, ভ্রমণ কাহিনী ইত্যাদি। প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে বেদ, রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ, জাতকের গল্প, বৌদ্ধ ও জৈন সাহিত্য, অর্থশাস্ত্র ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ লিখিত উপাদান।
অলিখিত উপাদান: অলিখিত উপাদানের মধ্যে পড়ে স্থাপত্য, ভাস্কর্য, মুদ্রা, তৈজসপত্র, জীবাশ্ম, হাতিয়ার, গয়না, কবর ইত্যাদি। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন অলিখিত উপাদানের প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

ইতিহাস পাঠের গুরুত্ব:

ইতিহাস পাঠের মাধ্যমে আমরা অতীতের ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারি। অতীতের ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমানকে সুন্দর করে গড়ে তোলা এবং ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করাই ইতিহাস পাঠের মূল উদ্দেশ্য। ইতিহাস পাঠ আমাদের মনে দেশপ্রেম জাগায়, জাতীয়তাবোধ তৈরি করে এবং আমাদের মধ্যে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলে।

ইতিহাসে কিভাবে সময়কে চেনা যায়

ইতিহাস হল সময়ের গল্প। তাই সময়কে জানা ইতিহাসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ঐতিহাসিকরা সময়কে বুঝতে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করেছেন। এই অধ্যায়ে প্রাক্‌-ইতিহাস, প্রায়-ইতিহাস এবং ঐতিহাসিক যুগ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

প্রাক্‌-ইতিহাস: যে সময়কাল সম্পর্কে কোনও লিখিত উপাদান পাওয়া যায় না, সেই সময়কালকে প্রাক্‌-ইতিহাস বলা হয়। এই সময়ের ইতিহাস রচনার জন্য ঐতিহাসিকরা মূলত প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের উপর নির্ভর করেন।
প্রায়-ইতিহাস: যে সময়কাল সম্পর্কে অল্প কিছু লিখিত উপাদান পাওয়া যায়, কিন্তু সেই লিপির পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়নি, সেই সময়কালকে প্রায়-ইতিহাস বলা হয়। হরপ্পা সভ্যতার লিপি এখনও পর্যন্ত পড়া সম্ভব হয়নি, তাই এই সভ্যতাকে প্রায়-ঐতিহাসিক যুগের সভ্যতা বলা হয়।
ঐতিহাসিক যুগ: যে সময়কাল সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমাণে লিখিত উপাদান পাওয়া যায় এবং সেই লিপির পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, সেই সময়কালকে ঐতিহাসিক যুগ বলা হয়।

কাল বিভাজন:

ঐতিহাসিকরা ইতিহাস চর্চার সুবিধার্থে সময়কে বিভিন্ন যুগে ভাগ করেছেন। প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসকে সাধারণত তিনটি যুগে ভাগ করা হয়: প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ এবং আধুনিক যুগ। তবে এই যুগ বিভাজন নিয়েও ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে।

ভারতবর্ষের ইতিহাস রচনার উপাদান:

এই অধ্যায়ের শেষ অংশে ভারতবর্ষের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপাদানের ভূমিকা আলোচনা করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, সাহিত্য, শিলালিপি, তাম্রলিপি, মুদ্রা, ভ্রমণ বৃত্তান্ত ইত্যাদির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান: ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে খননকার্য চালিয়ে বহু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে, যা থেকে প্রাচীন ভারতের ইতিহাস সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা যায়। হরপ্পা, মহেঞ্জোদারো, লোথাল, কালিবঙ্গান, ধোলাভিরা ইত্যাদি প্রত্নক্ষেত্রগুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
সাহিত্য: বেদ, রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ, বৌদ্ধ ও জৈন সাহিত্য, অর্থশাস্ত্র, চরক সংহিতা, সুশ্রুত সংহিতা, কালিদাসের রচনা ইত্যাদি থেকে প্রাচীন ভারতের ইতিহাস সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা যায়।
শিলালিপি ও তাম্রলিপি: সম্রাট অশোকের শিলালিপি, সমুদ্রগুপ্তের এলাহাবাদ প্রশস্তি, দ্বিতীয় পুলকেশীর আইহোল প্রশস্তি ইত্যাদি শিলালিপি থেকে তৎকালীন রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা যায়।
মুদ্রা: বিভিন্ন সময়ের মুদ্রা থেকেও অনেক ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়। মুদ্রায় অঙ্কিত রাজার নাম, মূর্তি, সন-তারিখ ইত্যাদি থেকে সেই সময়ের ইতিহাস জানা যায়।
ভ্রমণ বৃত্তান্ত: বিভিন্ন সময়ে যেসব বিদেশী পর্যটক ভারতবর্ষে এসেছিলেন, তাদের লেখা ভ্রমণ বৃত্তান্ত থেকেও আমারা অনেক ঐতিহাসিক তথ্য পাই। মেগাস্থিনিসের ‘ইন্ডিকা’, ফা-হিয়েন, হিউয়েন সাঙ, ইবন বতুতা প্রমুখের ভ্রমণ বৃত্তান্ত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

Leave a Comment